ছেলেমেয়েদের বিষয়ে অভিভাবকদের নজর রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
১৩ জুলাই ২০১৬, ১৭:০৪
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি সন্তানরা যেন বিপথে যেতে না পারে সেজন্য অভিভাবককে তাদের সন্তানের প্রতি নজর রাখারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার দুপুরে গণভবনে জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণার বিষয়ে ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের আলাপে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন জেলায় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন তিনি। দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসন সে নির্দেশ কতোটুকু বাস্তবায়ন করছে, তা জানতে প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার তার সরকারী বাসভবন গণভবনে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে ৩২টি জেলার প্রশাসন ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলেন।
দুপুরে প্রথম দফায় ঢাকা ও ময়মনসিংহের ১৬ টি জেলার প্রতিনিধিদের সাথে আলাপে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যাহত করতে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে জঙ্গি হামলা করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সরকারের দৃঢ় অবস্থানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী, সন্তানদের ব্যাপারে অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
জঙ্গি হামলায় উচ্চশিক্ষিতদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা উচ্চশিক্ষিত, ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করছে, সেই ছেলে-মেয়েরা কীভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যাচ্ছে, নিখোঁজ হয়ে যায় পরিবার থেকে? অথচ প্রশ্ন আসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। এ নিয়ে রিপোর্ট দিতো মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এখন দেখা যায় অনেকে স্বেচ্ছায় গুম হয়ে এখন তারা এ ধরনের কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা কোথায় নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। আমরা উৎস খুঁজে বের করবো।
প্রধানমন্ত্রী তাগিদ দেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ সবাই যেন নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করেন। এ বিষয়ে বিশেষ করে মা-বাবা যেন সজাগ থাকেন।
তিনি বলেন, তাদের ছেলে মেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে তার খোঁজখবর নেবেন। তাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরাও খোঁজ-খবর রাখবেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ সবাই যেন নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করেন, সেই আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারব। ইসলাম ধর্মকে যেন কেউ কলুষিত করতে না পারে, সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
বিকেলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলার প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গণসচেতনতার উপর জোর দিয়ে বলেন, ধর্মান্ধ একটি গোষ্ঠী জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালিয়ে ইসলামকে হেয় করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। কোনো জঙ্গির স্থান, সন্ত্রাসের স্থান বাংলাদেশে হবে না। যারা ইসলামের নাম করে মানুষ হত্যা করছে, তারা আমাদের পবিত্র ধর্মের বদনাম করছে দেশে-বিদেশে। আমাদের ধর্মে আছে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু তারা রমজানে তারাবি না পড়ে, ঈদের দিন ঈদের নামাজ না পড়ে মানুষ মারছে। ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সবার কল্যাণে কাজ করতে চাই, এটাই আমাদের করা লক্ষ্য।’
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সর্বস্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি মুক্ত করতে পারবো। সবাই একযোগে কাজ করলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে পারবে না।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে প্রশাসনকে জোরালো ভূমিকা রাখার আবারো নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন