একনেকে ছয় প্রকল্প অনুমোদন : নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিন— প্রধানমন্ত্রী
১০ আগস্ট ২০১৬, ১১:২২
ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষকদের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে
বন্যাকবলিত এলাকার পানি সরে যাওয়ার পর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তিনি সংশ্লিষ্টদের এই অনুশাসন দেন। বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে শেরেবাংলানগরস্থ এনইসি মিলনায়তনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ১ হাজার ৮১৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৮০২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
সভায় ৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের শস্য সংগ্রহ পরবর্তী সহযোগিতার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ফসল উত্পাদনের মৌসুমে দরিদ্র কৃষকদের ঋণ দেওয়া হবে, এর ফলে কৃষকরা তাদের উত্পাদিত ফসল ন্যায্য দামে বিক্রয় করতে পারবে। বৈঠকে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের অধিকাংশ কৃষকই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র পর্যায়ের। এ সকল প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের অধিকাংশেরই জীবিকা শুধু উত্পাদিত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ফলে কৃষকরা মাঠ পর্যায়ে ফসল সংগ্রহের পরপরই স্বল্প লাভে কিংবা উত্পাদন খরচের চেয়েও কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এই ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের ফসল ওঠার সময় ঋণ দেওয়া গেলে কৃষকরা কিছুদিন ফসল সংরক্ষণ করতে পারবেন। এর ফলে লাভের পরিমাণও বাড়বে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পটির আওতায় প্রতিজন কৃষককে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হবে। সহজ কিস্তিতে আদায়যোগ্য এ ঋণের সুদহার থাকবে বছরে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ। পাঁচ জেলার ৯ উপজেলায় পরীক্ষামূলক এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২১ পর্যন্ত সময়ে এ প্রকল্পের সুবিধা পাবেন ১৫ হাজার কৃষক। এতে সফলতা এলে সারা দেশে এমন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রান্তিক কৃষকদের জন্য অধিকতর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুত্ প্রকল্পে ঋণ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। সভায় প্রায় ১০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ফেনী জেলার সোনাগাজীতে ১০০ মে.ও. সৌর ও ১০০ মে.ও. বায়ুচালিত বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঋণের পরিবর্তে বিদ্যুত্ প্রকল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ উত্সাহিত করার কথা বলেছেন। প্রকল্পের আওতায় জমি কেনা হলেও কেন্দ্র স্থাপনে বেসরকারি খাতকে উত্সাহ দেওয়া হবে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে— ৬২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ২৮০ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকার পোল্ডার নং-৬২ (পতেঙ্গা), পোল্ডার নং-৬৩/১এ (আনোয়ারা), পোল্ডার নং-৬৩/১বি (আনোয়ারা এবং পটিয়া) পুনর্বাসন প্রকল্প, ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভোমরা স্থলবন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প (১ম সংশোধিত) এবং ৫৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্প।
সভায় জানানো হয়, এর আগে ডিএনডি এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটির মাধ্যমে ডিএনডি এলাকায় ২টি পাম্প স্টেশনে ১৩টি পাম্প বসানো হবে। সেই সঙ্গে পাগলা, শ্যামপুর ও ফতুল্লায় তিনটি পাম্পিং প্লান্ট নির্মাণসহ ৭৯টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা দূর করতে নিষ্কাশন খাল ও সংযোগ খাল পুনঃখনন করা হবে।