১০ উদীয়মান বাজারের অন্যতম বাংলাদেশ
১৪ আগস্ট ২০১৬, ১৯:২২
রপ্তানি, বিনিয়োগ সম্ভাবনা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও বিপুল জনশক্তি—সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। লন্ডনভিত্তিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ ভবিষ্যতের যে ১০টি উদীয়মান বাজার চিহ্নিত করেছে তার অন্যতম বাংলাদেশ। সংস্থার মতে, আগামী ১০ বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি হবে এই ১০ উদীয়মান বাজার। ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে এ দেশগুলোর ধারাবাহিক অবদান বেড়ে হবে ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যা জাপানের বর্তমান অর্থনীতির সমতুল্য।
এ দেশগুলোর অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে ম্যানুফ্যাকচারিং ও নির্মাণ খাত। সংস্থার মতে, নতুন ম্যানুফ্যাকচারিং কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও পাকিস্তানে। এ দেশগুলো, বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং পণ্য রপ্তানিতে জোরালো প্রবৃদ্ধি দেখাবে। এসব দেশে নির্মাণ খাতও ব্যাপকতা লাভ করবে। মূলত নগরায়ণ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের সম্ভাবনা থেকেই নির্মাণ খাত অনেক বেশি বিস্তৃত হচ্ছে দেশগুলোতে। অন্যদিকে মাইনিং, তেল ও গ্যাসের মতো খাতগুলোর ভূমিকা প্রবৃদ্ধিতে আগের চেয়ে ক্ষুদ্র হবে।
সংস্থা জানায়, যে ১০টি দেশ তাদের কয়েকটি খাতকে কাজে লাগিয়ে জোরালো প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে যাবে। সে দেশগুলোর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ। এ দেশ ২০১৫ সালে ৬.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গার্মেন্ট এবং কৃষিভিত্তিক পণ্য রপ্তানি করে এ দেশ আগামী বছরগুলোতেও জোরালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
দ্বিতীয় দেশ মিসর। ২০১৫ সালে ৪.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দেশটি। মিসরের প্রবৃদ্ধিতে মূল চালিকাশক্তি প্রাকৃতিক গ্যাস। তৃতীয় ইথিওপিয়া। এ দেশটি ২০১৫ সালে ১০.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। কৃষিভিত্তিক শিল্পকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাচ্ছে এ দেশ। চতুর্থ দেশ ইন্দোনেশিয়া। এ দেশটি গত বছর ৪.৮ শতাংশ প্রবৃিদ্ধ অর্জন করেছে। কৃষিভিত্তিক শিল্পকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। পঞ্চম উদীয়মান বাজার কেনিয়া। গত বছর এ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৫.৬ শতাংশ। চা, কফিসহ কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য রপ্তনি করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে কেনিয়া।
ষষ্ঠ উদীয়মান বাজার মিয়ানমার। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ দেশ গত বছর ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। গণতন্ত্রে ফেরায় মিয়ানমারে বিদেশি বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে। আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া অন্যতম উদীয়মান বাজার। গত বছর ২.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা এ দেশটির অর্থনীতিতে বড় শক্তি জ্বালানি তেল। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে নাইজেরিয়া।
১০ উদীয়মান বাজারের মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। এ দেশটির বড় সম্ভাবনা কৃষিভিত্তিক শিল্প ও তেল। গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি আসে ৪.২ শতাংশ। এশিয়ার আরেক সম্ভাবনাময় বাজার ফিলিপাইন। এ দেশটি গত বছর ৫.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ইলেকট্রনিক পণ্য, পরিবহন যন্ত্রাংশ ইত্যাদি রপ্তানি করে এগিয়ে যাচ্ছে ফিলিপাইন। ১০ উদীয়মান বাজারের সর্বশেষ দেশ ভিয়েতনাম। এ দেশটি গত বছর ৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। কৃষিভিত্তিক পণ্য ও তেলকে ঘিরে এ দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে।
ইতিপূর্বে ডুটচে ব্যাংকের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ চারটি দেশের এমনই এক চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববাজার ব্যবস্থায় ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে নিউ এশিয়ান ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস বা বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমার। অর্থনৈতিক সংকটে যেখানে উন্নত দেশগুলো ভুগছে, সেখানে এ দেশগুলো ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। এ চারটি দেশের মাথাপিছু আয় অনেক কম হলেও উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
এশিয়ার এ চারটি দেশের বিশেষ সুবিধার মধ্যে রয়েছে প্রচুর জ্বালানি সম্পদ, কম মজুরি এবং বাণিজ্যিক ছাড়। বাংলাদেশ এবং কম্বোডিয়ার প্রধান শিল্প তৈরি পোশাক। অন্যদিকে মিয়ানমার ও লাওস জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশগুলোর শ্রম মজুরি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনেক বেশি আকর্ষণীয়। এ ছাড়া এ বাজারগুলো থেকে পণ্য আমদানিতে বিশেষ ছাড় রয়েছে। এ দেশগুলোর পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে প্রবেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, যা শিল্প উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বড় ধরনের সুযোগ তৈরি করে দেয়। কয়েক বছর যাবত দেশগুলোতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নও হয়েছে। রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশের নিচে। বিজনেস ইনসাইডার, সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক।