জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে নারীকে দেখতে চান মুন
১৭ আগস্ট ২০১৬, ১৭:০৭
আমেরিকান মামের সঙ্গে বান কি মুন এ বছর নারীদিবসে নারীদের জন্য সব ধরনের সমতা নিশ্চিত করার প্রশ্নকেই প্রতিপাদ্য হিসেবে নিয়েছিল জাতিসংঘ। জাতিসংঘের এই তাগিদ থেকেই বোঝা যায়, সমতা এখনও অর্জিত হয়নি। বোঝা যায় খোদ জাতিসংঘের ইতিহাসে চোখ ফেরালেই। প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পরও এখন পর্যন্ত কোনও নারী জাতিসংঘের নেতৃত্ব দেননি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতিসংঘে এখনও কোনও নারী মহাসচিব না থাকার সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সংস্থাটির বর্তমান মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে তিনি কোনও একজন নারীকে দেখতে চান।
ক্যালিফোর্নিয়ার নোভাতোতে লিব্বা প্যাটারসন নামের ৯৯ বছর বয়সী এক নারীর (যাকে তিনি আমেরিকান মাম ডেকে থাকেন) বাড়িতে সফরের সময় এ কথা বলেন বান। ১৮ বছর বয়সে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ওই বৃদ্ধার বাড়িতেই থেকেছিলেন বান ও তার পরিবার। এরপর থেকেই লিব্বার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় বানের। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান খবরটি নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে বান কি মুনের দ্বিতীয় দফায় পাঁচ বছর মেয়াদ একেবারে শেষের দিকে। এরইমধ্যে বান কি মুনের স্থলাভিষিক্ত ১১ জন প্রার্থিতা পেয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী রয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে বান কি মুন বলেন, ‘আটজন পুরুষ মহাসচিবের পর জাতিসংঘের জন্য এখন নারী মহাসচিব প্রয়োজন। জাতীয় সরকার, বিভিন্ন সংস্থা, ব্যবসায়িক অঙ্গন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আমরা অনেক প্রভাবশালী নারীকে নেতৃত্ব দিতে দেখছি। সুতরাং জাতিসংঘেও নারী নেতৃত্ব না থাকার কোনও কারণ নেই।’
কারও নাম উল্লেখ না করে বান কি মুন বলেন, ‘অনেক বিশিষ্ট ও অনুপ্রেরণাদাতা নারী নেত্রী রয়েছেন যারা সত্যিকার অর্থে পৃথিবীকে বদলে দিতে পারেন, যারা সক্রিয়ভাবে বিশ্বের অন্য নেতাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন’।
জাতিসংঘের মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চার নারী
তবে জাতিসংঘের মহাসচিব বাছাইয়ের কাজটি তার ওপর নির্ভর করে না উল্লেখ করে বান কি মুন জানান, ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ একজন প্রার্থীর নাম সুপারিশ করবে এবং তা অনুমোদনের জন্য ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করা হবে। বান কি মুনের মতে, নারী বা পুরুষ মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর ওপর নির্ভর করছে। তবে জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব প্রার্থীদের সকলের ব্যাপারে প্রথমবারের মতো জনশুনানি করায় সাধারণ পরিষদের প্রশংসা করেছেন বান।
নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিকে ক্রমান্বয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের পদে বসানো হয়। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের প্রতিনিধিরা এরইমধ্যে বিশ্বের সেরা এ কূটনৈতিক পদটিতে আসীন হয়েছেন। তবে রাশিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো যুক্তি দেখিয়ে থাকে, তাদের অঞ্চল থেকে কখনও জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত না হওয়ায় এবার তাদের পালা। ৫৬ রাষ্ট্রবিশিষ্ট একটি গোষ্ঠী এরইমধ্যে জাতিসংঘের প্রথম নারী মহাসচিবের জন্য প্রচারণা শুরু করেছে।
মহাসচিব নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দুটি অনানুষ্ঠানিক জরিপ চালিয়েছে। এ জরিপে ১২টি দেশ অংশ নেয়। দুটি জরিপের প্রত্যেকটিতেই মহাসচিব পদে নারী তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। আর তা অনেককেই হতাশ করেছে। পর্তুগিজের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান অ্যান্টোনিও গুটেরেস দুটো জরিপেই শীর্ষস্থানে রয়েছেন।
প্রথম জরিপে ইউনেস্কোর প্রধান ও বুলগেরিয়ার নাগরিক ইরিনা বোকোভা তৃতীয় স্থান পেলেও দ্বিতীয় জরিপে তার অবস্থান পঞ্চম। দ্বিতীয় জরিপে বানের সাবেক চিফ অব স্টাফ এবং আর্জেন্টিনার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুসানা মালকোরা তৃতীয় হয়েছেন। প্রথম জরিপে সর্বশেষ স্থানে থাকা সাবেক ক্রোয়েশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভেসনা পুসিক দ্বিতীয় জরিপে ঝরে পড়েছেন। বাকি তিন নারী মহাসচিব প্রার্থী হলেন, নিউ জিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ইউএনডিপির প্রধান হেলেন ক্লার্ক, কোস্টারিকার নাগরিক ও জাতিসংঘের কর্মকর্তা ক্রিস্টিনা ফিগুয়েরেস এবং মলদোভার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাতালিয়া ঘেরমান। ২৯ আগস্ট নিরাপত্তা পরিষদে মহাসচিব নির্বাচন সংক্রান্ত আরেকটি জরিপ হওয়ার কথা রয়েছে। সেপ্টেম্বেরেও দুয়েকটি জরিপ হওয়ার কথা। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন