এই রহস্যময় দুই শিশুর গায়ের রং সবুজ কেন জানেন তা?
২৩ আগস্ট ২০১৬, ১০:৩০
একদিন সকালে হঠাৎ দেখা গিয়েছিল তাদের। এক বালক এবং এক বালিকা। দেখে মনে হয়েছিল দুই ভাইবোন। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে হাত ধরে ইতস্তত ঘুরছিল ইংল্যান্ডের সাফোক কাউন্টির উলপিট গ্রামে। সেই দ্বাদশ শতকে। গ্রামের মানুষের চক্ষু চড়কগাছ হয় গিয়েছিল তাদের গায়ের রং দেখে। দুই শিশুর গায়ের রং ছিল সবুজ। ইতিহাসে তথা লোকমুখের কিংবদন্তিতে আজও ঘুরেফিরে আসে উলপিট গ্রামের সবুজ শিশু বা গ্রিন চিল্ড্রেনদের কথা।
লোককথায় পরিণত হলেও অনেকেই মনে করেন মধ্যযুগীয় ব্রিটেনে সত্যি এই ঘটনা ঘটেছিল। দুই ভাইবোনকে নিয়ে চরমে উঠেছিল কৌতূহল। তারা নাকি দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলত। খেত শুধু সিদ্ধ সবুজ বিনস।
ধীরে ধীরে তারা অন্য খাবারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। গায়ের রংও স্বাভাবিক হতে থাকে। কিন্তু কিছুদিন পরে মারা যায় ভাইটি। তবে ক্রমশ নতুন জীবনে মানিয়ে নেয় বোন। ইংরেজি ভাষায় ধাতস্থ হলে সে জানায়‚ তারা থাকত সেন্ট মারিনার দেশে। সেখানে নাকি সবার গায়ের রং সবুজ। এবং সেই দেশ নাকি মাটির নিচে। কিংবদন্তি বলে‚ পরে নাকি বোনটি বিয়েও করেছিল উলপিট গ্রামে।
তবে সমাজ গবেষকরা কিন্তু এখানেই থেমে যেতে রাজি নন | তাঁদের দাবি‚ কোনও রহস্য বা ভিন গ্রহের তত্ত্ব নয়। সবুজ শিশুদের পিছনে আছে ঘোর বাস্তব তত্ত্ব।
কেউ বলেন‚ ওই দুই শিশু ছিল নরফোকের এক জমিদার বা আর্লের অভিভাবকত্বে। তাদের সম্পত্তি হাতাতে আর্সেনিক প্রয়োগ করে আর্ল। বিষের প্রভাবে দুই অনাথ শিশুর গায়ের রং হয়ে যায় সবুজ। কথাবার্তাও হয়ে যায় অসংলগ্ন।
আবার কেউ মনে করেন‚ দুই শিশু ছিল ফ্লেমিশ শরণার্থী। একাদশ-দ্বাদশ শতকে ফন্ডলার বা উত্তর বেলজিয়াম থেকে দলে দলে ফ্লেমিশরা এসেছিল ব্রিটেনে। তাদের বেশিরভাগকেই রাজা স্টিফেনের নির্দেশে হত্যা করা হয়।হত্যালীলা থেকে বেঁচে দুই শিশু হয়তো লুকিয়ে ছিল ঘন জঙ্গলে। ফলে সাময়িকভাবে গায়ের রং হয়ে গিয়েছিল সবুজ।
আবার অনেকের মত‚ ওই দুই শিশু এসেছিল উলপিটের পাশের গ্রাম সেন্ট মার্টিন থেকে। প্রাণ বাঁচাতে খনিগর্ভে লুকিয়ে থাকায় বদলে গিয়েছিল গায়ের রং। কিংবা তারা হয়তো ভুগছিল রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ায়। যাকে তখন বলা হত গ্রিন সিকনেস। পরে পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে ফিরে আসে ত্বকের স্বাভাবিক বর্ণ।
গল্পের উৎস যাই হোক না কেন‚ সবুজ ভাইবোনকে মনে রেখেছে উলপিট গ্রাম। এখনও সে গ্রামে গেলে দেখা যায় দুই শিশুর মূর্তি। পার্ক এবং স্থানীয় গির্জায়। আধুনিকতার মোড়কে স্মরণ করা হয়েছে মধ্যযুগীয় লোককথাকে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন