ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচন
২৭ আগস্ট ২০১৬, ০৯:৩২
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে আগামী ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচন করছে সরকার। এ নির্বাচন করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ জন্য জেলা পরিষদের সীমানা নির্ধারণের বিধিমালা জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সরকার বছর শেষে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে। এ জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশেষ করে জেলা পরিষদের সীমানা নির্ধারণের বিধিমালাও জারি করেছে।
বিধিমালা অনুযায়ী, জেলা প্রশাসকরা ১৫টি ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ করে পরিষদের অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করবেন। তবে এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের অখণ্ডতা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি জেলা পরিষদ আইনকে অধ্যাদেশে পরিণত করার কাজ চলছে। খুব শিগগিরই এটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়, জেলা পরিষদের প্রতিটি ইউনিটের জন্য একজন করে মোট ১৫ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। তিনটি ইউনিট নিয়ে একটি সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে, যেখানে পরোক্ষ ভোটে পাঁচজন নির্বাচিত হবেন। জেলা পরিষদের জন্য একজন নারী ও আরেকজন পুরুষ মোট দু’জন ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন।
বিধিমালা অনুযায়ী ওয়ার্ড গঠন: সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিধিমালায় ওয়ার্ড গঠনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ওয়ার্ড সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য নির্বাচনের জন্য পরস্পর সন্নিহিত ওয়ার্ডগুলো যতদূর সম্ভব একত্রে রাখতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের অখণ্ডতা বজায় রাখতে হবে। প্রতি ওয়ার্ডের নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যা যথাসম্ভব কাছাকাছি সংখ্যায় নির্ধারণ করতে হবে।
সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা নিয়োগের ১৫ দিনের মধ্যে ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত করে কোন এলাকা কোন ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত হবে, তার প্রাথমিক তালিকা বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তালিকা প্রকাশের পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে এ নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে তা দাখিল করা যাবে। তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় শুনানির মাধ্যমে আপত্তি ও পরামর্শ নিষ্পত্তি করবেন। প্রয়োজনে প্রাথমিক তালিকা সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন করা যাবে।
সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা প্রত্যেক ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এলাকা উল্লেখ করে ওয়ার্ডের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবেন। একই সঙ্গে সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যে তিনটি ওয়ার্ডকে সমন্বিত করে একটি ওয়ার্ডের সীমানা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করবেন। প্রাথমিক তালিকা সম্পর্কে আপত্তি দাখিলের সময়সীমা পার হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে হবে। সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা কর্তৃক প্রকাশিত তালিকা চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচন করতে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণের লক্ষ্যে বিধিমালা জারি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ব্যাপারে আইন সংশোধন করতে হবে। এ ব্যাপারে নাগরিকদের মতামত নেয়া প্রযোজন।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকার দলীয়ভাবে নির্বাচন করছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, পরোক্ষ ভোটের এ নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীরাই জিতবেন। কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারদলীয়রাই নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে হয়ে আছেন।
সর্বশেষ ২০০০ সালে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন সংশোধন করা হয়। শর্তসাপেক্ষে পরোক্ষ নির্বাচনের বিধানও রাখা হয় সংশোধিত আইনটিতে। স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনের ১৯ ধারায় চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে, পরিষদ প্রথমবার গঠনের ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে তারিখ নির্ধারণ করবে সে তারিখ থেকে পরিষদ গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। আইনে নির্বাচনের জন্য আলাদা বিধি প্রণয়নের বিধানও রাখা হয়েছে। যদিও নির্বাচনের জন্য বিধান বা প্রথমবার পরিষদের গঠনের গেজেট এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
সংশোধিত আইনে একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জেলা পরিষদ গঠনের বিধান রয়েছে। জেলার অধিক্ষেত্রের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলার চেয়ারম্যান, সদস্য, নারী সদস্য সবার ভোটে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদন ও কার্যকর করা হয়। এই সংবিধানের ৫৯(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হবে। এরই মধ্যে আইনের দ্বারা ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদকে প্রশাসনিক ইউনিট ঘোষণা করা হয়েছে। পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনও এর অন্তর্ভুক্ত।’
সংবিধান ও আইন বিধিবিধানে স্থানীয় সরকারের সব স্তর জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে তা অকার্যকর রয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৮৮ সালে প্রথম জেলা পরিষদগুলোতে এমপিদের চেয়ারম্যান হিসেবে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকার শাসনের অবসান হলে ১৯৯১ সালে জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এর পর থেকে একজন সরকারি কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে জেলা পরিষদের কার্যক্রম চলে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর দেশের (তিন পার্বত্য জেলা বাদে) ৬১টি জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়।