বহিষ্কৃত নেতাদের শাস্তি প্রত্যাহারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৯:৩০
বিগত ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যেসব নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূল পর্যায় থেকে বহিষ্কারসহ অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল, সেসব সুপারিশ প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাঁরা দলকে দীর্ঘদিন সার্ভিস দিয়েছেন। সম্মেলন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় উৎসব। তাঁরা এখানে অংশ নেওয়ার অধিকার রাখেন, তাই তাঁদের শাস্তি প্রত্যাহার করতে হবে।
মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত যৌথ সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও ২০তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত উপকমিটিগুলোর আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের ওই যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের কমিটির পরিসর বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তাঁরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটি ৭৩ সদস্য থেকে বাড়িয়ে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট করার পক্ষে মত দিয়েছেন। প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির প্রস্তাব উপস্থাপনের পর সম্মেলনের স্লোগানও চূড়ান্ত করা হয়েছে। ‘সম্মেলনের অঙ্গীকার, রুখতে হবে জঙ্গিবাদ’—এ স্লোগান সামনে রেখে আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হবে।
এর আগে সভায় সূচনা বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর সব দেশেই জঙ্গিদের শক্ত হাতে দমন করা হয়। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তাহলে এসব জঙ্গি-সন্ত্রাসী, রাজাকারের জন্য আপনাদের এত মায়াকান্না কেন?’
সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিল, যারা তাদের জন্য মায়াকান্না কাঁদে, তারাও সমানভাবে অপরাধী। তারাও যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার। তারা সব জেনেশুনেই এই অপরাধীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায় বসিয়েছিল। এ দেশের মাটিতে তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।’ তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার শুরু হয়েছিল জিয়া তা মার্শাল ল অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাতিল করে দেয়। সমস্ত মামলা তুলে নেয়, যারা সাজাপ্রাপ্ত তাদের ছেড়ে দেয়। যারা বাংলাদেশ চায় নাই, যারা পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে চলে গিয়েছিল, ওই গোলাম আযম ওরা, তাদের আবার পাকিস্তানি পাসপোর্টেই দেশে ফিরিয়ে আনে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই সম্পূর্ণভাবে ধূলিসাৎ করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর থেকে প্রতি রাতে কারফিউ দিয়েছে। পঁচাত্তর থেকে দেশে যে কারফিউ শুরু হলো তা কিন্তু প্রায় ৮৬ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, এ দেশের স্বাধীনতার যে অর্জনগুলো একে একে তা ধূলিসাৎ করা হয়। জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের বেশির ভাগকেই হত্যা করা হয়। পঁচাত্তরের পরে দেশে ১৯টা ক্যু হয়, তার খেসারত দিয়েছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী।’
বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত দিন মানুষ পুড়িয়ে হত্যার পর এখন ওনারা জঙ্গিদের নিয়ে খেলছেন। পোড়া মানুষের জন্য তাঁর (খালেদা জিয়া) কান্না আসে না, নিহত জঙ্গিদের নিয়েই তাঁর এত মায়াকান্না কেন? এদের (নিহত জঙ্গি) বিরুদ্ধে যদি অ্যাকশন না নেওয়া হতো, যদি মারা না যেত, তারা আরো মানুষকে হত্যা করত—এটাই কি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন?’
বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সারা দেশে ভয়াবহ নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা বা বিচার না করে কি ফুল-চন্দন দিয়ে বরণ করা হবে? এসব করার হুকুম দেওয়ার আগে কি তা মনে ছিল না?’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে আসেননি, এটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি নিজে তাঁকে ফোন করেছি, একাধিক প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু তাতে রাজি না হয়ে উনি নির্বাচনে আসেননি। কী আশায় উনি বসে ছিলেন? বিএনপি নেত্রীর ভুলের খেসারত কেন দেশের জনগণকে দিতে হবে?’
যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।
৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে মত : আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের কমিটির পরিসর বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তাঁরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৮১ সদস্যের কমিটি গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন। গতকালের যৌথ সভায় তাঁরা এ মত দেন।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত বিভিন্ন উপকমিটি তাদের প্রস্তুতির সার্বিক চিত্র সভায় উপস্থাপন করে। গঠনতন্ত্র উপকমিটির পক্ষ থেকে সংগঠনের সব পর্যায়ের কমিটির পরিসর ৭৩ সদস্য থেকে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। তখন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাদের কাছে প্রস্তাব জানতে চান। বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কেন্দ্রীয় কমিটি ৮১ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রস্তাব দেন। তাঁরা জেলা কমিটি, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটির পরিসরও বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। শেখ হাসিনা এসব প্রস্তাবের আলোকে কমিটির পরিসর বাড়ানো হবে বলে জানান।
সূত্র জানায়, যৌথ সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়। উত্তরের সমন্বয়ক ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং দক্ষিণের সমন্বয়ক ও দলের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক আজ বুধবার দলীয় সভাপতির কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেবেন।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন