প্রচ্ছদ

শিশু-কিশোরদের আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান

১৮ অক্টোবর ২০১৬, ২৩:৩২

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

img_7603প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু-কিশোরদের মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া শিখে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে দেশের জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের শিশু এবং আগামী দিনের কর্ণধারদের আমি বলব দেশের জন্য জাতির জন্য সবসময় যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ মহান ত্যাগের মধ্য দিয়েই যে কোন মহান উদ্দেশ্য অর্জন করা যায়, জাতির পিতা এটাই আমাদেরকে শিখিয়েছেন।’
শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি শুধু আমাদের ছেলে-মেয়েদের একটা কথাই বলব, সবাইকে মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হতে হবে। কারণ এদেশের ভবিষ্যত কর্ণধার তোমরাই। সুতরাং তোমাদেরকে আজকের বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে শেখ রাসেলের ৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই না এদেশে কোন জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ থাকুক। কারণ এই জঙ্গিবাদের সত্যিকার আঘাতটা আমরাই পেয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই এদেশ একটি শান্তির দেশ হবে। উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হবে। আমি জানি এটা অর্জন করা খুব কঠিন। আজকে বাংলাদেশ যে পযায়ে এসেছে তা আনতে প্রচন্ড কষ্ট করতে হয়েছে। অনেক সংগ্রাম-ত্যাগ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সেজন্য আজকের শিশু এবং আগামী দিনের কর্ণধারদেও আমি বলব দেশের জন্য জাতির জন্য সবসময় যেকোন ত্যাগ ম্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ মহান ত্যাগের মধ্য দিয়েই যে কোন মহান উদ্দেশ্য অর্জন করা যায়,জাতির পিতাই এটাই আমাদেরকে শিখিয়েছেন।’
তিনি গুরুজনকে সন্মান জানানোর জন্য আগামী প্রজন্মের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, পিতা-মাতা, শিক্ষক তাঁদেরকে সন্মান করতে হবে। বড়দের কথা শুনতে হবে। নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। আর মনযোগ দিয়ে পড়তে হবে। কারণ শিক্ষিত না হলে একটা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এজন্যই আমরা প্রযুক্তি শিক্ষাকে সবথেকে গুরুত্ব দিয়েছি। একটা মানুষও এদেশে ক্ষুদার্ত থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না, শিশুরা শিক্ষার জন্য সবাই স্কুলে যাবে। মানুষের মত মানুষ হবে। তাঁদের মেধাবিকাশের সুযোগ হবে- এ ধরনের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রাকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী,- সংগঠনের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এমপি, মহাসচিব মাহমুদুস সামাদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক মুজাহিদুর রহমান এবং লায়ন মো. মজিবুর রহমান হাওলাদার। সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি কে এম শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। শিশু নাফিস বিন নাদিমও শিশুদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ’৬৪ সালে রাসেলের যখন জন্ম হয় তখন আব্বা (বঙ্গবন্ধু) নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত-পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ফাতেমা জিন্নাহকে সর্বদলীয় বিরোধী দলের প্রার্থী করে প্রচারণা চালাচ্ছে। আব্বা তখন নির্বাচনের কাজে চট্টগ্রামে। আইয়ুব খানের মার্শাল ল’এর যুগ সেটা। সেই সময় ধানমন্ডী ৩২ নাম্বারে রাসেলের জন্ম। জন্মলগ্ন থেকে সকলের মাঝে বেড়ে উঠলেও পিতৃ¯েœহ সে খুব কমই পেয়েছে। ’৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফা দিলেন এই ৬ দফা প্রচার করতে গিয়ে বারবার তাঁকে গ্রেফতার হতে হয়েছে। ৮ মে ছোট্ট রাসেলের কাছ থেকে তাঁর বাবাকে গ্রেফতার করে নেয়ার পর ’৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। সেই ছোট্ট রাসেলকে কিন্তু সবসময় পিতার ¯েœহ বঞ্চিতভাবে বড় হতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যখনই আমরা কারাগারে যেতাম দেখা করতে তাঁকে (রাসেল)নিয়ে আসা কঠিন ছিল, অনেক কষ্ট করে তাঁকে নিয়ে আসতে হত। তখনতো কথাও বলতে শুরু করেনি। এরপর যথন কথা বলতে আরম্ভ করলো সে বাবাকে খুঁজে বেড়াত। তাই হয়তো খেলার সময়ও কিছুক্ষণ পর পর সে বাবাকে একবার দেখতে যেত, তার মনে হয়তো হারাবার ভয়টা কাজ করতো।
প্রধানমন্ত্রী বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, মাঝে মাঝে মা রাসেলকে সান্তনা দিত-আমিই তোমার বাবা আবার আমিই তোমার মা। এরপর যখন কারাগারে আমাদের সঙ্গে বাবাকে দেখতে যেত সে একবার বাবাকে আব্বা বলে ডাকতো আবার একবার মাকে আব্বা বলে ডেকে হত বিহবল হয়ে পড়তো। এভাবেই ছোট্ট রাসেল বেড়ে উঠেছে। এরপর ৬৮ সালে বাবাকে ক্যান্টনমেন্টে ৬ মাস বন্দি করে রাখলো, আমরা তাঁর কোন খবর পাইনি, তিনি বেঁচে আছেন কি না সেখবরও আমাদের কাছে ছিল না। তখন শিশু রসেল মাঝে মাঝেই রাতে খুব কান্নাকাটি করতো। আমরা সবাই আসতাম তাকে স্বান্তনা দিতে। কিন্তুু আমরা কি স্বান্তনা দেব, আমরাওতো বাবার ¯েœহ বঞ্চিত।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ধানমন্ডী ১৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে বন্দি থাকাবস্থায় সঙ্গীহীন রাসেলের দু:সহ জীবনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর কেবল সাড়ে ৩ বছর সময়ই সে পিতৃস্নেহ পেলেও ঘাতকদের নির্মম বুলেটে তাকে শাহাদাৎবরণ করতে হয়েছে। ঘাতকরা তাঁকেও ছাড়েনি। সবার শেষে তাঁকেও নির্মম ভাবে হত্যা করলো। কত ছোট্ট একটা জীবন রাসেলের। একটা উদ্দেশ্য হয়তো ঘাতকদের ছিল,বঙ্গবন্ধুর রক্তের কাউকে বাঁচিয়ে না রাখা। সবার শেষে এই অবুঝ শিশুটিকেও কষ্ট দিয়ে তারা হত্যা করলো।
চিরকালই পিতৃস্নেহ বঞ্চিত রাসেলকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় ব্যস্থ থাকতাম লেখাপড়া নিয়ে, বাবা কারাগারের বাইরে থাকলে ব্যস্ত থাকতেন তাঁর সংগঠন নিয়ে, মা সংসার সামলানো ছাড়াও বাবার মামলা মোকদ্দমা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন-কাজেই রাসেলকে অনেক সময় একা বাড়িতে থাকতে হত, সেই সময়টা ওর জন্য খুবই কষ্টকর ছিলো।
তিনি বলেন, তারপরেও আমরা যতটুকু সময় পেতাম ওকে (রাসেলকে) সময় দিতে চেষ্টা করতাম। আজকে বেঁচে থাকলে কত বড় হত ? সেটা মাঝে মধ্যেই চিন্তা হয়।
রাসেলের নামকরণ বিখ্যাত মনিষী বার্টান্ড রাসেলের নামানুসারে রাখা মর্মে স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাসেলের নামটি আমার মায়েরই রাখা। সে সময় তাঁদের বাড়িতে বই পড়ার রেওয়াজ ছিল। বঙ্গবন্ধু সময় পেলেই কবিতা আবৃত্তি করতেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করতেন। বার্টান্ড রাসেলের বইগুলো থেকে তরজমা করে মাকে শোনাতেন। তাঁর ফিলোসফি আব্বার খুব পছন্দ ছিল। আমার মা খুব জ্ঞান পিপাসু ছিলেন, লেখাপড়ার তেমন সুযোগ না পেলেও আব্বার বাংলা তর্জমা তিনি মনযোগ দিয়ে শুনতেন। শুনতে শুনতে তিনিও রাসেলের ফিলোসফির প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং রাসেল জন্মাবার পর তাঁর নাম রাসেল রাখেন।
শেখ হাসিনা আবেগাপ্লুত কন্ঠে ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, ঐ ধানমন্ডীর বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে আছে পিতার লাশ, নিচে পড়ে আছে ভাইয়ের লাশ,মায়ের লাশ সেখান থেকে নিূেয় রাসেলকেও হত্যা করা হল। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটুক আমরা চাইনা। কারণ ১৫ আগষ্ট যে ঘটনা ঘটেঝে একমাত্র কারবালার ঘটনার সঙ্গেই এর তুলনা চলে। কারবালাতেও হয়তো শিশুদেও এভাবে হত্যা করা হয়নি। কিন্তুু এখানে অসহায় নারী, সন্তান সম্ভবা স্ত্রী, শিশু কাউকেই বাদ দেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইনডেমনিটি আইন করে বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব, শেখ রাসেল সহ ১৫ আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিচারের পথ রুদ্ধ করায় জিয়াউর রহমান সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন।
সরাসরি নাম উল্লেখ না করলেও সে সময় জিয়া সরকার কতৃর্ক বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরী দেয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত করাকে কোন সভ্য সমাজের ইতিহাসে নজীরবিহীন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বর্তমান (বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর) বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ রাসেলের জন্ম। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে ঘাতকরা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শিশু রাসেলকেও। তখন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত শেখ রাসেল।
শেখ রাসেল স্মরণে আয়োজিত শিশু কিশোর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কারও বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে তিনি মনজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার