প্রধানমন্ত্রী হাঙ্গেরি পৌঁছেছেন
২৮ নভেম্বর ২০১৬, ০৯:০৭
ঢাকা, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ড. জানোস এডার-এর আমন্ত্রণে বুদাপেস্ট পানি শীর্ষ সম্মেলন-২০১৬-তে অংশ নিতে চারদিনের সফরে আজ অপরাহ্নে বুদাপেস্টে এসে পৌঁছেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমানটি রবিবার স্থানীয় সময় ৬টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ১৫ মিনিটে) বুদাপেস্টের ফিরেন্স লিজট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
হাঙ্গেরির সিকিউরিটি পলিসি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইস্টভ এন মিকোলা, হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবু জাফর এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত হাঙ্গেরির রাষ্ট্রদূত গাইউলা পেথো এবং হাঙ্গেরির চিফ অব প্রটোকল ইস্টভ মেননো বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।
বিমানবন্দরে পৌঁছার পর হাঙ্গেরিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে ফোর সিজন্স হোটেল গ্রিসহাম প্যালেস-এ নিয়ে যাওয়া হয়। সফরকালে তিনি এ হোটেলে অবস্থান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফর সঙ্গিদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমানটি রবিবার স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে) বুদাপেস্টের ফিরেন্স লিজট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল কিন্তু তুর্কেমিনেস্তানের রাজধানী আশখাবাতে অনির্ধারিত যাত্রা বিরতির কারণে চারঘন্টা বিলম্বে বুদাপেস্ট পৌঁছায়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট নং বিজি ১০১১ “রাঙ্গা প্রভাত”রবিবার সকাল ৯টা ১৪ মিনিটে ঢাকা থেকে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। যাত্রাপথে উক্ত বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় ফ্লাইটটির গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে অবতরণ করে। উক্ত ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীসহ ৯৯ জন যাত্রী, ৪ জন ককপিট ক্রু, ২০ জন কেবিন ক্রু এবং ৪ জন এয়ারক্রাফ্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। এয়ারক্রাফ্টটি আশখাবাতে অবতরণ করার পর ডিউটিরত ইঞ্জিনিয়ারগণ ক্রুটি মেরামতের জন্য কাজ করেন।
এরই মধ্যে ঢাকা থেকে লন্ডনগামী বিমানের অপর একটি সিডিউল ফ্লাইট বিজি ০০১ ‘‘আকাশ প্রদীপ”কে যাত্রাপথ পরিবর্তন করে আশখাবাতে প্রেরণ করা হয় এবং তা বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে সেখানে অবতরণ করে। বিজি ০০১ ফ্লাইটকে ভিভিআইপি ফ্লাইটের ব্যাকআপ কভারেজ দেয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পাঠানো হয়।
তবে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি ১০১১) ‘‘রাঙ্গা প্রভাত” এর যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামত পূর্বক বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে আশখাবাত থেকে বুদাপেষ্টের পথে যাত্রা করে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফর সঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট সকাল ৯টায় বুদাপেস্টের উদ্দেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ত্যাগ করে।
প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানানোর জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, সংসদে চিফ হুইপ এএসএম ফিরোজ অন্যান্যের মধ্যে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনৈতিক কোরের ডিন এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী দু’দিনের বুদাপেস্ট পানি শীর্ষ সম্মেলন (বিডাব্লিউএস-২০১৬)-এর বিভিন্ন অধিবেশনে যোগদান করবেন এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করবেন।
তিনি বাংলাদেশ-হাঙ্গেরিয়ান বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক ফোরামের উদ্বোধন এবং প্রেসিডেন্ট জানোস এডার’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের হাই লেভেল প্যানেল অন ওয়াটার (এইচএলপিডব্লিও)-এর একজন সদস্য। সোমবার পানি শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি যোগদান করবেন এবং তিনি হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য সম্মানীয় অতিথিদের সঙ্গে একটি সাসটেইনেবল ওয়াটার সল্যুসন এক্সপো পরিদর্শন করবেন।
পরদিন তিনি শীর্ষ সম্মেলনের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন এবং প্রেসিডেন্ট জানোস এডার’র দেয়া ওয়ার্কিং লাঞ্চে শরীক হবেন।
তিনি মঙ্গলবার সকালে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে কসুদ স্কয়ারে দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। আশা করা হচ্ছে সেখানে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।
দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনা, পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সহযোগী ও কৃষি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে এবং এফবিসিসিআই ও হাঙ্গেরিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেও একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হবে।
শেখ হাসিনা সোমবার বিকেলে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট জানোস এডার’র সঙ্গে সান্দর প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদে বৈঠক করবেন।
তিনি মঙ্গলবার বুদাপেস্টে ‘হিরোস স্কয়ার’ পরিদর্শন করবেন এবং ফুল দিয়ে হাঙ্গেরি প্রতিষ্ঠায় জাতীয় বীর ও নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে দেশের উদ্দেশে বুদাপেস্ট ত্যাগ করবেন এবং রাত সাড়ে এগারোটায় ঢাকা পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন- এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ ছাড়া এফবিসিআই সভাপতি আবদুল মতলুব আহমেদের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদলও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী রয়েছেন।(বাসস)