প্রাণের মেলার পর্দা উঠল
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৮:২০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠল মাসব্যাপী একুশের বইমেলার।
প্রতি বছরের মতো এবারও ১ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এ গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে দেশের নানাপ্রান্তের মানুষ এবং প্রবাসী বাঙালিদের বিপুল সমাগম ঘটে। এই মেলা এখন পরিণত হয়েছে বৃহত্তর বাঙালির মিলনমেলায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার দিনগুলোতে সেই ক্যাম্পাস জীবনের আনন্দের কথা শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকায় নিয়মের কড়াকড়িতে এখন আর সেই তরুণ দিনের মতো বইমেলায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হয় না বলে আক্ষেপ করেন।
“এখানকার লাইব্রেরিটা আমার বেশ প্রিয় ছিল। আমি ও আমার বান্ধবী বেবী মওদুদ এখানে আসতাম।… ব্যস্ত থাকতে হয়, অনেকটা বন্দি থাকতে হয়…।
তিনি বলেন, “আবার কবে মুক্ত হতে পারব, বইমেলায় ঘুরে বেড়াতে পারব, সেই আশায় আছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশের গ্রন্থমেলা ঘিরে দেশি-বিদেশি লেখকদের আগমনে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সৃষ্টি করে নবতর চাঞ্চল্য।
তিনি বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ প্রকাশের ওপর গুরুত্ব দেন এবং এ দেশের ধ্রুপদী ও সাম্প্রতিক সাহিত্যের নির্বাচিত সম্ভার বিশ্বপাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে তাগিদ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “ভাষার জন্য যেভাবে ত্যাগ স্বীকার করেছি, সেভাবে ভাষার মর্যাদা রক্ষার কাজও আমরা করেছি।”
এই অনুষ্ঠানেই এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ১১ জনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি স্মরণ করেন রফিকুল ইসলাম, আবদুস সালামের মত প্রবাসী বাঙালিদের, যাদের চেষ্টায় আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাঙালির শহীদ দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পথে বাধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর আমরা সরকার গ্রহণ করতে পারিনি। বিএনপি-জামাত বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে সেটা আমরা সঠিকভাবে নির্মাণ ও চালু করতে পেরেছি।
সেই ইনস্টিটিউট এখন ইউনেস্কোর ‘ক্যাটাগরি-২’ মর্যাদা পেয়েছে এবং সেখানে বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গবেষণা ও কাজ হচ্ছে বলে অনুষ্ঠানের অতিথিদের জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা একাডেমির উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রাঙ্গণটা এতই প্রিয় ছিল যে, যখনই ক্ষমতায় এসেছি তখনই চেষ্টা করেছি কীভাবে এই জায়গাটাকে উন্নত করা যেতে পারে। এখানে যে পুকুরটা ছিল সেটাকেও আমরা সংরক্ষণ করেছি। তারই পাশে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করেছি।”
শহীদুল্লাহ ভবন, এনামুল হক ভবন, নভেরা আহমেদের নামে একটি প্রদর্শনী কক্ষ করার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
এবারের বইমেলায় বঙ্গবন্ধুর একটি জীবনীগ্রন্থকে ব্রেইল মাধ্যমে প্রকাশ করায় বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বাঙালির গৌরবময় ইতিহাস ও সাহিত্য পড়ার ক্ষেত্রে এই ব্রেইল প্রকাশনা সহায়ক হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলা একাডেমি আয়োজিত গ্রন্থমেলা তিন দশক পেরিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময়ের একটি বইমেলায় পরিণত হয়েছে।… এক মাস চললেও আমাদের মন ভরে না। মনে হয় আরও বেশিদিন চললে বোধোহয় ভাল হবে।”
এ বছর চার লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুটের পরিসরে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে, যা গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
পরিসর বাড়ার পাশাপাশি মেলার সাজ-সজ্জায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে শিশুকর্নার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকলেও এবার তা মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জায়গার সঙ্গে সঙ্গে স্টলও বেড়েছে এবার। গত বছর যেখানে ৩৫১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছিল, এবার অনুমতি পেয়েছে সাড়ে চারশ প্রকাশনা সংস্থা।
এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে স্টল দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের থাকছে ১৫টি প্যাভিলিয়ন। এছাড়া রয়েছে ৯২টি লিটল ম্যাগাজিন।
এবারও একাডেমির নজরুল মঞ্চে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা হয়েছে। মেলার দুই অংশেই ওয়াই-ফাই সুবিধা থাকবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ কমিশনে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইপ্রেমীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। ছুটির দিনগুলোতে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
গত বছর বইমেলা চলার সময় টিএসসির কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় লেখক অভিজিৎ রায়কে। তার এক যুগ আগে একই এলাকায়ই হামলার শিকার হয়েছিলেন লেখক হুমায়ুন আজাদ।
অভিজিৎ খুন হওয়ার পর আরও ব্লগার, লেখক, প্রকাশক জঙ্গি হামলার শিকার হওয়ায় বইমেলার নিরাপত্তার বিষয়টি এবার অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন