ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূল : ৪ জনের মৃত্যু
৩১ মে ২০১৭, ১০:৪৮
৩১ মে, ২০১৭ : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র তান্ডবে কক্সবাজার জেলায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মোরা’র আঘাতে কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৭ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন- ঘুর্ণিঝড়ে ৪ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে চকরিয়া উপজেলায় ঘরে গাছ চাপা পড়ে ২ জন নিহত হয়েছে। এরা হলেন- উপজেলার ডুলাহাজারা গ্রামের রহমত উল্লাহ (৫০) এবং পূর্ব বড়ভেওলা গ্রামের সায়রা খাতুন (৫৫)। পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া গ্রামে ঝড়ে উড়ে আসা টিনের আঘাতে নিহত হয়েছেন আবদুল হাকিম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ। কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদে গাছ চাপা পড়ে মারা গেছে শাহীন আকতার (১০) নামে এক কিশোরী।
জেলা প্রশাসক জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে এই পর্যন্ত ৬০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই আহত হয়েছে বাতাসে উড়ে আসা টিনের আঘাতে এবং গাছ চাপা পড়ে।
তিনি জানন, ঘুর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক বিবরণ মতে সম্পূর্ণ বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ১৭০২৩টি। ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫ কাজার ৫১৬টি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৫২ হাজার ৫৩৯। গৃহহারা এসব লোকজনের জন্য প্রাথমিক ভাবে ১১০ মেট্রিক টন চাল এবং ৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে এই চাল ও অর্থ বিতরণ কাজ শুরু হয়েছে।(বাসস)
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একে এম নাজমুল হক জানিয়েছেন- ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’ প্রথম আঘাত হানে মঙ্গলবার সকাল ৬টায় সেন্টমার্টিন উপকূলে। এই সময়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে ঘন্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। সকাল ১০টা নাগাদ এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়া উপকূল অতিক্রম করে।
তিনি জানান- ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় সাগরে ভাটা থাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়নি। ফলে ব্যাপক প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
কক্সবাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী সবিকুর রহমান জানিয়েছেন- ঘর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় সকালে ভাটা থাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়নি। তবে মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটা এবং টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে বেড়ি বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে দুপুরে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক নয় বলে তিনি জানান।
কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়–য়া জানান, গাছ উপড়ে জেলার অধিকাংশ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে কাজ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বিকাল নাগাদ যানবাহন চলাচল পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক সহ আরো কয়েকটি সড়কে উপড়ে পড়া গাছ সরিয়ে নেয়ার জন্য কাজ চলছে।
এদিকে ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে জেলাব্যাপি উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের কয়েক শত খুঁটি। ছিড়ে গেছে বিদ্যুতের তার। ফলে সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন- ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য বিরতিহীনভাবে কাজ চলছে। বিভাগের কর্মীরা সরেজমিনে কাজ করছে। তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কখন নাগাদ বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে।
মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন- মহেশখালীতে ৫ হাজারের অধিক কাঁচা ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সড়কে গাছ পড়ে থাকায় উপজেলার প্রধান দু’টি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ধেয়ে আসার খবরে সোমবার দুপুর থেকে উপকূলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র সরিয়ে আনার কাজ শুরু করে প্রশাসন। সন্ধ্যায় ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত ঘোষনা হলে উপকূলের লোকজন আতংকিত হয়ে পড়ে। ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানান, জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুই লক্ষাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রিত এসব লোকজনের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে আহতদের জরুরি চিকিৎসার জন্য ৮৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।