ধর্ষণ কাকে করা যাবে, আইএসের ফতোয়া
১২ জানুয়ারি ২০১৬, ২৩:৫০
আটক নারী দাসিদের সঙ্গে যৌনকর্মের নিয়মকানুন সংবলিত পুঙ্খানুপুঙ্খ ফতোয়া জারি করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সংগঠনটির ধর্মতাত্ত্বিকদের দাবি, বন্দী নারীদের ওপর সহিংসতা কমাতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা।
তবে সমালোচকরা বলছেন, সিরিয়া ও ইরাকে নিয়ন্ত্রণাধীন জায়গাগুলোতে আটক নারীদের যৌন দাসি হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টি ন্যায্য করতেই বহু প্রাচীন ইসলামিক শিক্ষাকে নতুন করে ব্যাখ্যা করছে আইএস।
গত মে মাসে আইএসের শীর্ষ এক নেতাকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর অভিযানের সময় উদ্ধার করা বিপুল নথিপত্রের মধ্যে ফতোয়াটি পাওয়া যায়। এ নথিই পর্যালোচনা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, যা এর আগে কখনো প্রকাশ পায়নি।
আইএসের জারি করা ফতোয়ার মধ্যে রয়েছে : বাবা ও ছেলে একই নারীর (যৌনদাসি) সঙ্গে যৌনকর্ম করতে পারবে না; এবং মা ও মেয়ের মালিক উভয়ের সঙ্গে যৌনকর্ম করতে পারবে না।
সম্প্রতি জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করে, ইরাকের উত্তরাঞ্চলে নারী ও কন্যাশিশুদের, সংখ্যালঘু বিশেষ করে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের, অপহরণ করে ধর্ষণ করছে আইএস।
এই বিষয়টি জঙ্গি সংগঠনটি বেশ গর্বের সঙ্গেই প্রচার করে আসছে এবং এসংক্রান্ত ‘যুদ্ধের জঞ্জাল’ নামের একটি বিভাগও খুলেছে তারা।
গত ২০ এপ্রিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আইএসের কবল থেকে পালিয়ে আসা ২০ নারীর সাক্ষাৎকার নেয়। তারা জানায়, পুরুষ ও বৃদ্ধ নারীদের কাছ থেকে তরুণী ও কিশোরীদের আলাদা করে আইএস। এরপর তাদের সৃশৃঙ্খলভাবে সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। পরে বিক্রি করে বা উপহার হিসেবে অন্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর তাদের বার বার ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হতে হয়।
ফতোয়া নম্বর ৬৪, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৫। আইএসের গবেষণা ও ফতোয়া কমিটি যোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের নারী বন্দীদের যৌন সম্পর্কের বিষয়টি বিধিবদ্ধ করতেই ফতোয়াটি জারি করে।
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির আইএস বিশেষজ্ঞ কোল বুনজেল বলেন, ‘এর মাধ্যমে আইএসের দাসি-মালিকদের নিয়ে সত্যিকার উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে।’ তিনি জানান, ফতোয়ায় যেসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে সহিংসতার বিষয়টিই সামনে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।’
মিসরের হাজার বছর পুরনো আল-আজহার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আবদেল ফাত্তাহ আলাওয়ারি বলেন, ‘আইএসের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। শত শত বছরের পুরোনো কোরআনের আয়াতের তারা ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। অথচ আসলে এসব আয়াতে মূলত দাসব্যবস্থা অবসানের কথা বলা হয়েছে।’
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বের ১২০ জন ইসলামিক পণ্ডিত আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি বরাবর খোলা চিঠি লেখেন। এতে জঙ্গি সংগঠনটির কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। পণ্ডিতরা বলেন, ‘দাসব্যবস্থার পুনর্বহাল ইসলামে নিষিদ্ধ।’
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন