২০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ সুরমায় টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ও শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
১৭ জুলাই ২০১৯, ১৭:৪৫
জাহাঙ্গীর আলম মুসিক, দক্ষিণ সুরমাঃ সিলেটবাসীকে ‘টেক্সটাইল’ বিষয়ক দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিষ্ঠান দু’টির কার্যক্রম শুরু হলে সিলেটে ‘টেক্সটাইল’ বিষয়ক অধ্যয়নের নবসূচনা হবে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের তৈয়ব সুলতান মৌজায় ১০ একর ভূমিতে পৃথক পৃথক ভাবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মোট ২০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে সিলেট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ও শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। প্রকল্প দু’টির নির্মাণ কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিগত ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প দু’টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্প দুটির নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সেনাবাহিনী যতœসহকারে এ নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছেন।
সিলেট কীনব্রিজের দক্ষিণ মুখ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের পাশে শহরতলীর তৈয়ব সুলতান মৌজায় সিলেট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ও শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর নির্মাণ কাজ সঠিক সময়ে শেষ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শ্রমিকগণ দিন-রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
১১০ কোটি ৩৬ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫ একর ভূমির উপর শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নির্মাণ কাজ চলছে। এর পাশেই ৯৫ কোটি ৬৫ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫ একর ভূমির উপর সিলেট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হলে সিলেটসহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত হতে পারবে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তৈরি পোশাকসহ বস্ত্রশিল্প খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশের রফতানিখাতে বস্ত্রখাতের অবদান প্রায় ৮০ শতাংশ। এ সেক্টরে উত্তরোত্তর অগ্রগতির সঙ্গে প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবলের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বস্ত্র পরিদফতর কর্তৃক প্রণীত ২০১৪-১৫ সাল থেকে ২০২০-২১ সাল নাগাদ দেশে ও বিদেশে টেক্সটাইলে দক্ষ জনবলের চাহিদা সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে বস্ত্রখাতে ১৫ হাজার দক্ষ জনবল আছে যারা বিদেশী, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ অন্যান্য দেশ থেকে এসেছেন। তারা ডলারে যে পরিমাণ বেতন নিয়ে যায় তা বাংলাদেশের ৭ লক্ষ শ্রমিকের বেতনের সমান। যেজন্য বস্ত্রখাতে দক্ষতা অর্জনে দেশের প্রতিটি জেলায় একটা করে টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকার।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বস্ত্রশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও প্রশিক্ষিত জনবলের সংকট রয়েছে। বস্ত্র পরিদফতরের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২০২১ সাল নাগাদ বি.এস.সি পাশ বস্ত্র প্রকৌশলীর চাহিদা থাকবে ২৫ হাজার ৩০৩ জনের। কিন্তু সরবরাহ থাকবে ১৭ হাজার ৫০০ জনের। সরবরাহের পরও আরো ৭ হাজার ৮০৩ জন প্রকৌশলীর প্রয়োজন। শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-সিলেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতি বছর অন্ততঃ ১২০ জন বি.এস.সি ডিগ্রিধারী বস্ত্র প্রকৌশলী তৈরি করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সিলেটে কলেজটি বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় শিক্ষার্থীরাও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন ।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে আরো জানা গেছে, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চল শিল্পখাতের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনাময়। কিন্তু দক্ষ বিনিয়োগকারী ও পরিকল্পনার অভাবে শিল্পখাতের তেমন বিকাশ হচ্ছে না। এই কলেজ ও ইন্সটিটিউটটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সিলেট অঞ্চলে টেক্সটাইল শিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে সুধিজন মনে করছেন। তবে, এজন্যে প্রতিষ্ঠান দুটিতে বিশ্বমানের সিলেবাস ও অভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে পরিচালনার জন্য তাগিদ দেন তারা।
এ ব্যাপারে কুচাই ইছরাব আলী স্কুল এন্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি শাহ নিজাম উদ্দিনের সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, আমাদের এলাকায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট স্থাপিত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। আমাদের ছেলে-মেয়েরা খুব সহজেই ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে।
শ্রীরামপুর সিরাজ উদ্দীন একাডেমী পরিচালনা কমিটির সভাপতি এডভোকেট শামীম আহমদ এর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, যোগাযোগ সুবিধাজনক স্থানে এ প্রতিষ্ঠান দুটি স্থাপিত হওয়া দেশের যে কোন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সহজেই যাতায়াত করতে পারবে। প্রতিষ্ঠান দুটির সমৃদ্ধিতে এলাকাবাসী সব সময় সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
এ ব্যাপারে সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী জানান, আমার নির্বাচনী এলাকার দক্ষিণ সুরমায় উচ্চ শিক্ষার দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এ জন্য আমি আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ ও সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারণে দেশে এ ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও সিলেট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এর প্রকল্প পরিচালক মোতাহার হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রকল্প দুটি ২০২০-২১ অর্থ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ না হলে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তীতে আরো ভূমি প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।