ক্লান্তিহীন পথচলা এক জনসেবক ও অকুতোভয় এক যোদ্ধা ছিলেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী
১৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭
যিনি জনসেবাকে ইবাদত হিসেবে গ্রহন তার রাজনৈতিক পথচলা শুরু করেছিলেন। কিশোর বয়সে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি মানুষের সেবায় তার জীবন বিলেয়ে দিবেন, তাই করেছিলেন মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। তিনি যা কথা দিতেন তা যতই কঠিন এবং কষ্টসাধ্য হোক সফল না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়তেন না, যাকে বলে “হাল না ছাড়া নাছোড় বান্দা”। ছোট বেলায় কেমন ছিলেন তিনি, আমরা উনার ভাই ও বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি এবং তিনি যখন ছোট বেলার স্মৃতি অনেক সময় আমাদের কাছে শেয়ার করতেন। তার সকাল শুরু হতো ফজরের নামাজের আগে। প্রথমে ঘুম থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সমতল ও পাহাড় দৌড়ে ফুটবল মাঠে প্র্যাকটিস করে আবার দৌড় দিতেন স্কুলে আবার দৌড় দিয়ে প্রাইভেট টিচার অর্থাৎ উনি বলতেন আমি সারাদিন দৌড়ের ওপরে থাকতাম। বিরামহীন এই মানুষ স্কুল জীবন এনজিএফএফ স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করে বিলেতে চলে যান উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করতে। পড়ালেখা শেষ করে সেখানেই ব্যবসা জীবন শুরু করে একজন সফল ব্যবসায়ি হয়ে যান। মাতৃভূমির টান তাকে বিলেতের বিলাসবহুল জীবন তাকে আটকাতে পারেনি। ১৯৮৬/৮৭ সালে দেশে এসে গড়ে তুলেন সামাদ টেক্সটাইল নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তখন এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলছিল। মতিঝিল-৭৭ ছিল উনার ব্যবসায়িক অফিস। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে তখন বসতে গেলে পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেফতার চলত। তখন ৭৭ মতিঝিল সামাদ গ্রুপের অফিস হয়ে উঠে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বসার জায়গা।
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থানের স্কুল পড়োয়া অবস্থায় মশাল জ্বালিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি লালন করেছিলেন সুযোগ পেলে দেশের ও মানুষের জন্য তিনি রাজনীতি করবেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সিনিয়র নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। তারপর জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে তিনি অনেক সাহসী ভূমিকা পালন করেন।
১৯৮৯ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা উনাকে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিবের দায়িত্ব দেন তখন থেকে তিনি শিশু-কিশোর এই সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেন পাশাপাশি নিজ জন্মস্থানের সেবার মনোভাব নিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯১ সালে তিনি সতন্ত্র হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তখন তিনি আগামী নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সিলেট-৩ আসনের জনগণের আস্তা অর্জন করতে সক্ষম হতে শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং মাত্র ২৪৬ ভোটে পরাজিত হন। পরাজিত হয়ে তিনি থেমে থাকেননি তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগঠনকে শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়ার জন্য দিন-রাত কাজ করেন। ২০০১ সালে দ্বিতীয় বারের মত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে আবারও অল্প ভোটে পরাজিত হন। পরাজিত হওয়া মানে ব্যর্থ নয় এই কথাকে কাজে লাগিয়ে তিনি তৃণমূলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন। তিনি জয়ী হয়ে সিলেট-৩ ( ফেঞ্চুগঞ্জ- দক্ষিণ সুরমা- বালাগঞ্জ একাংশ) উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করেন। যে মনে প্রানে স্বপ্ন লালন করে তাকে কি কাহারো থামানোর সাধ্য আছে। তিনি জনসেবাকে ইবাদত হিসেবে গ্রহন করেছিলেন এবং আমৃত্যু জনকল্যাণে নিবেদিত থাকার যে পণ করেছিলেন তাকে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্রাম বা বিলাসিতা করার সুযোগ দেয়নি।
তিনি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে সারাদিনের কি কাজ করবেন সেটার পরিকল্পনা করতেন এবং সে অনুযায়ী তিনি সেটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করতেন। কোন কাজ তিনি ফেলে রাখতেন না। সময়ের কাজ তিনি সময়ের ভিতরে শেষ করার চেষ্টা করতেন। সফল হতে কি করা লাগে একজন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী -কে দেখলে তা আপনি শিখতে পারবেন। তিনি কখনও সময়কে অবহেলা করতেন না। তিনি প্রতিদিন যে পরিকল্পনা করতেন সেটি তিনি সময়ের ভিতরে শেষ করতেন। তিনি নেতা-কর্মী ও জনগণকে সময় দিতেন গভীর রাত পর্যন্ত সপ্তাহে অন্তত তিনদিন। এত ব্যস্ততার পরেও তিনি তার পরিবার ও আত্নীয়-সজনের খোঁজ নিতেন নিয়মিত। এ যেন পথচলার নিখুঁত পরিকল্পনা।
আমার পরম সৌভাগ্য হয়েছে তাকে কাছ থেকে পরখ করার। আমার জীবনের সেরা পাওয়া হলো একজন সফল মানুষের কাছ থেকে জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার।
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে নিয়ে লিখতে গেলে লেখা শেষ হবেনা একটি গ্রন্থ লেখা যাবে, তবুও আমার লেখা শেষ হবেনা। সিলেট-৩ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মরহুম মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন।
(লেখাতে ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
জুলহাস আহমদ
সদস্য ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সদস্য ফেঞ্চুগঞ্জ প্রেসক্লাব
সিলেট-৩ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মরহুম মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী’র ব্যক্তিগত সহকারী (2016-2021)