প্রচ্ছদ

রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০০:৩৪

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

download (1)চলতি মাসেই বাড়ছে রেলের ভাড়া। রুটভেদে ভাড়া বাড়ছে ৭-৯ শতাংশ পর্যন্ত। পাশাপাশি বাড়ছে ট্রেনে ভ্রমণের ন্যূনতম ভাড়াও। রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব গত বৃহস্পতিবার অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। আর গতকাল এ-সংক্রান্ত সরকারি আদেশ (জিও) জারি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

রেলওয়ের তথ্যমতে, নতুন হার কার্যকর হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া ২৬৫ থেকে বেড়ে হবে ২৮৫ টাকা। শোভন চেয়ারে ভাড়া ৩২০ টাকার স্থলে হবে ৩৪৫ টাকা, এসি চেয়ার ৬১০ টাকার স্থলে ৬৫৬ টাকা, এসি সিট ৭৩১ টাকার স্থলে ৭৮৮ ও এসি বার্থে ১ হাজার ৯৩ টাকার স্থলে ১ হাজার ১৮৯ টাকা। ঢাকা-খুলনা রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া ৩৯০ থেকে বেড়ে হবে ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৬৫ থেকে ৫০৫, এসি চেয়ার ৮৯১ থেকে ৯৬১, এসি সিট ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ১৫৬ ও এসি বার্থের ভাড়া ১ হাজার ৫৯৯ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১ হাজার ৭৩১ টাকা।

ঢাকা-সিলেট রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া হবে ২৬৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০, এসি চেয়ার ৬১০, এসি সিটে ৭৩৬ ও এসি বার্থে ১ হাজার ৯৯ টাকা। ঢাকা-রাজশাহী রুটে উল্লিখিত শ্রেণীগুলোর ভাড়া হবে যথাক্রমে ২৮৫, ৩৪০, ৬৫৬, ৭৮২ ও ১ হাজার ৬৮ টাকা। অর্থাত্ ভাড়া বাড়ছে সাড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশ। অন্যান্য রুটেও প্রায় একই হারে বাড়ছে রেলের ভাড়া।

এদিকে রেলওয়ের প্রতিটি শ্রেণীতে ন্যূনতম ভাড়া ৫-১০ টাকা হারে বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনে ভাড়া বাড়ছে ৭-৯ শতাংশ হারে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বিভিন্ন রুটে গড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। তবে দূরত্ব ও শ্রেণীভেদে ভাড়ার হারে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ আসনের ভাড়া তুলনামূলক কম ও এসির ভাড়া বেশি হারে বাড়ছে। একই হারে বাড়ছে রেলে পণ্য ও কনটেইনার পরিবহন ভাড়াও। তবে ট্রেনের ভাড়া বাসের চেয়ে অনেক কম থাকবে।

রেলওয়ের তথ্যমতে, ২০ বছর পর ২০১২ সালের অক্টোবরে বাড়ানো হয় ট্রেনের ভাড়া। আর লোকসান কমানোর জন্য প্রতি বছর ভাড়া বাড়ানোর শর্ত দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ঋণের শর্তের কারণে এখন থেকে প্রতি বছর শুরুর দিকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হবে। এজন্য ট্যারিফ রিফর্ম পলিসি প্রণয়ন করা হয়েছে, যা অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে আগের অর্থবছরের তুলনায় শেষ হওয়া অর্থবছরে যে পরিমাণ ব্যয় বাড়বে সে অনুপাতে ভাড়া বাড়ানো হবে।

চলতি বছরের বর্ধিত ভাড়া ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে কার্যকর করা হতে পারে। তবে এখনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। গতকাল জারি করা জিওতে যত দ্রুত সম্ভব নতুন ভাড়া কার্যকরে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. ফিরোজ সালাহ্ উদ্দিন বলেন, ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেছে। যত দ্রুত সম্ভব এটা কার্যকরে রেলওয়েকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে সফটওয়্যার আপডেট করতে কিছুটা সময় লাগবে। আশা করা যায়, এক সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করা যাবে। এর পরই নতুন ভাড়া কার্যকর হবে।

সূত্র জানায়, ২০১২ সালের অক্টোবরে নতুন ভাড়া কার্যকরের আগে ট্রেনের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ছিল ২৪ পয়সা, যা বেড়ে হয় ৩৬ পয়সা। নতুন ভাড়া কার্যকর হলে তা বেড়ে হবে ৩৯ পয়সা। জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি এক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

এদিকে গত অর্থবছর রেলওয়ে ৯০০ কোটি টাকা লোকসান করে। তবে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলে লোকসান ৫০ কোটি টাকা কমবে। ফলে রেলওয়ের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।

এ বিষয়ে ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, ভাড়া বৃদ্ধি না করেও ট্রেনের যাত্রী সেবা লাভজনক করা সম্ভব। এজন্য ট্রেনপ্রতি কোচের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। এতে খরচ না বাড়লেও যাত্রী পরিবহন আয় বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি ট্রেনের টার্ন অ্যারাউন্ড বাড়িয়ে ট্রিপ বৃদ্ধি করা সম্ভব, যা ট্রেনের আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। আর জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে রেলের আয় অনেক বাড়বে। অথচ তা না করে রেলওয়ের অদক্ষতার বোঝা যাত্রীদের ওপর চাপানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ভাড়া বৃদ্ধিতে তথ্য গোপন করেছে রেলওয়ে। কারণ ট্যারিফ পলিসিতে লোকসান কমানো ও আয়-ব্যয় অনুপাত স্থিতিশাল রাখতে প্রতি বছর ভাড়া বাড়ানোর প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে বেতন-ভাতা বাবদ ২০১৩-১৪ অর্থবছর রেলওয়ের ব্যয় কমলেও তা বাদ দিয়ে শুধু জ্বালানি ও মেরামত ব্যয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জ্বালানি বাবদ ১৭ কোটি ৫৩ লাখ ও মেরামত বাবদ ২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। তবে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় ৫৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা কমেছে। এ হিসাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ব্যয় কমেছে ১২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অথচ বেতন-ভাতা বাদ দিয়ে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির অনুপাতে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছর সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় অনেক বাড়বে। তাই এবার বেতন-ভাতা হ্রাস বিবেচনায় নেয়া হয়নি। না হলে আগামী বছর অনেক বেশি হারে ভাড়া বাড়াতে হবে।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার